নান্দনিক শৈল্পিক সাজে খুলনার রূপসা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকালে ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচ দেখতে নদীর দুপাড়ে মানুষের ঢল নামে।
মাঝি-মাল্লাদের বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দের মন মাতানো ছন্দে চলে এ নৌকাবাইচ। অপরদিকে ঝাঁজ ও কাঁসির বাজনা বাজিয়ে সতীর্থদের উৎসাহ দিয়ে বাইচকে প্রাণবন্ত করে তোলেন নৌকার দল নেতা।
এবারের বাইচের শুরুতে আয়োজক কমিটির ক্যামেরাসহ ড্রোন উড্ডয়ন এবং একেবারে নিচে থেকে নদীর বুকে হেলিকপ্টারের টহল দর্শকদের আনন্দের নতুন ধারার সূচনা হয়।
এরকম নানাবিধ আনন্দময় পরিবেশে বাইচের লম্বাটে সরু নৌকাগুলো রূপসী রূপসা নদীর পানি কেটে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। যা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন রূপসা নদীর দুপাড়ের মানুষ। ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ তারা উপভোগ করেছেন নেচে-গেয়ে, আনন্দ-উল্লাস করে।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের মত এবারও রূপসা নদীতে ‘ফ্যান্টাস্টিক ১৪ তম নৌকাবাইচ’ এর আয়োজন করে। নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং আকিজ বেকার্স লিমিটেডের ফ্যান্টাস্টিক বিস্কুটের সৌজন্যে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুর ২টায় নগরীর ২ নম্বর কাস্টমঘাটে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণা করেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। পরে রূপসা নদীর কাস্টম ঘাট থেকে খানজাহান আলী (র.) সেতু পর্যন্ত নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনার দিঘলিয়া, কয়রা, নড়াইল, মাগুরা ও গোপালগঞ্জের ১২টি দল বাইচে অংশ নেয়।
বাইচ চলাকালে দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে দিঘলিয়ার ‘সোনার বাংলা’ নামের নৌকাটি নদীতে ডুবে যায়। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বাইচ শুরুর আগেই রূপসা সেতুসহ দুই নদীর তীর মানুষের ভিড় দেখা যায়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কয়েকশ ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, বড় বড় অসংখ্য কার্গো এবং নদীর পাড়ে ভবনের ছাদে উঠে লক্ষাধিক মানুষ বাইচ উপভোগ করেন। কাস্টম ঘাট এলাকা থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় আনন্দঘন পরিবেশ। নানা রঙের পোশাকে বাইচে অংশ নেন প্রতিযোগীরা। ঢাকঢোলসহ নানা বাদ্যের তালে তালে ছিল সারিগান। নানা বর্ণে, আনন্দে-উল্লাসে বেশ জমে ওঠে বাইচ।
দূর-দূরান্ত থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ এবং দুপুরের খাবার শেষে প্রতিযোগিতা দেখতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। নদীর দুপাড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে সুন্দরবন টাইগার, নৌকার মালিক আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আকরাম বিশ্বাসের দল মাগুরা টাইগার। তৃতীয় স্থান অধিকার করে তেরখাদার মো. দেদার মোল্লার দল ভাই ভাই জলপরী। সন্ধ্যায় পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।