ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সালামনগর গ্রামে (লক্ষ্মণপুর) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ আবদুস সালাম। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৮ সালে ওই গ্রামে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মিত হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নামে জাদুঘর হলেও তার ভেতরে ভাষা শহিদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। গ্রন্থাগারে চার-পাঁচ হাজার বই থাকলেও সেখানেও উপেক্ষিত শহীদ সালাম। তাকে নিয়ে একটি বইও দেখা যায়নি।
সালাম নগরের বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে জাদুঘরটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু সারাবছর এখানে আর কোনো কর্মকাণ্ড থাকে না। অনেক সময় দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর দেখতে এসে শহীদ সালামের কোনো স্মৃতিচিহ্ন না পেয়ে হতাশ।
উপজেলা শহর থেকে দূওে হওয়ায় গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা খুবই কম। গ্রন্থাগারের ভেতরে আলমারিতে ইতিহাস, বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম, কবিতা, উপন্যাস ও গল্পের বই ছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে অসংখ্য বই। বেশিরভাগ বই বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখকের লেখা। বেশিরভাগ বই দেখে মনে হয়, বইগুলো একবারও পড়া হয়নি।
গ্রন্থাগারটি দেখতে আসা সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার বলেন, শহীদ সালামের ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্র এখানে নেই। গ্রন্থাগারে চার-পাঁচ হাজার বই থাকলেও শহীদ সালামের ওপর লেখা কোনো বই পাইনি, তার উপর লেখা বই এখানে স্থান পেলে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতো। ভাষাশহীদ সালামের ওপর আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন।
দাগনভূঞা ইয়ুথ সোসাইটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ইফতেখারুল আলম জানান, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতি মাসে একবার করে পাঠচক্র করা হলে মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হতো। কিন্তু বছরে শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই জাদুঘরে মানুষের আনাগোনা হয়। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় এই জাদুঘর প্রাঙ্গণে।
ভাষাশহীদ সালামের ছোট ভাই আবদুল করিম বলেন, আমার দীর্ঘদিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাষাশহীদ সালামের নামে নামকরণ করা হয়। বিদ্যালয়টি যদি ৮ম বা ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত করা যায় তা হলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। তারা ওই গ্রন্থগারেরও সদস্য হতে পারে।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, ভাষা শহীদ আবদুস সালামের বাড়ি সালাম নগর হওয়ায় সেখানে ওই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি করা হয়েছিল। কিন্তু শহীদ সালামের কোনো স্মৃতিচিহ্ন না থাকায় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সেখানে মানুষকে বই পড়তে আসতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।